প্যারাডাইস লস্ট ও অন্যান্য জন মিল্টন. : মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
প্রিন্ট / প্রকাশনী: শব্দশিল্প
- Estimated Delivery : Up to 3 business days
- Free Shipping : On all orders over 1500 BDT
ওগো আমার কাব্যকলার সহৃদয় দেবী, আদি মানবের সেই ঐশ্বরিক আনুগত্যের প্রতি অবহেলা দেখানো অথবা ঈশ্বরের বিরোধিতার কথা আমাকে প্রথম বলো। আরো বলো নিষিদ্ধ গাছের সেই ফলটির কথা, যে ফল এই সুশীতল মাটির পৃথিবীতে মৃত্যু ডেকে এনেছে। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে নিয়ে এসেছে হাজারো দুঃখ এবং শেষমেশ ঘটিয়েছে বেহেশত থেকে বিদায়। পরে এক মহামানবের সহায়তায় সেই হারানো স্বর্গ মানুষ আবার ফিরে পেয়েছে।
ও আমার সহৃদয় দেবী! তুমি বলো সেই ওরেব বা সিনাই পর্বতের চুড়োর কথা, যার উপর থেকে ঈশ্বর আদি মানব জাতির মেষচারণরত মুসাকে দেখে প্রথম সৃষ্টির বীজ অঙ্কুরিত করে তোলার রহস্য শিখিয়ে দেন। যার বিনিময়ে সৃষ্টিহীন শূন্যতার মধ্য থেকে প্রথমে বেহেশত ও পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। এ কথা যদি তোমার ভালো লাগে, তবে তুমি সিডন পাহাড় আর জেরুজালেমের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মিলোয়া নদীর কথাও বোলো।
এরপর এমন এক দুরন্ত সঙ্গীত রচনার জন্যে তোমার সাহায্য চেয়ে তোমাকে আমি ডাকবো, যে সঙ্গীতের সুরলহরী অবলীলায় আওনিয়ান পর্বতের শিখরদেশ ছাড়িয়ে যেতে দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারবে। গদ্যে বা পদ্যে আজ পর্যন্ত যে বর্ণনা লেখা হয়নি, সেই সঙ্গীতের মধ্যে আমি তেমন বর্ণনা ফুটিয়ে তুলবো। ওগো দেবী আমার! যেহেতু তুমি উপাসনালয় বা ধর্মপ্রতিষ্ঠান থেকে ভক্তজনের মনের গভীরে থাকা সততা ও শুচিতাকে বেশি মূল্যবান মনে করো, তাই দয়া করে আমাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে এ বিষয়ে পরিচালনা কোরো। কারণ, কোনো কিছুই তোমার অজানা নয়। তুমি সৃষ্টিকর্ম শুরুর আগে থেকেই আছো, সৃষ্টিহীন বিশাল শূন্যতার গভীরে পায়রার মতো এক গভীর প্রশান্তির সঙ্গে শক্তিশালী বিশাল দুটো ডানা মেলে বসে ছিলে এবং তুমি ধীরে ধীরে সকল সৃষ্টিকে গড়েছো। আমার মধ্যে অজানার যে অন্ধকার রয়েছে, তার উপর জ্ঞানের আলোক ছড়িয়ে দিয়ে তাকে আলোকিত করো।
হে দেবী! আমার মধ্যে যতোটুকু দ্ধিধা ও হীনতা আছে, তাকে এক দৃঢ় ভিত্তিভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত করে তুলে ধরো, যেনো আমি যতো সব বিশৃঙ্খলা ও বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে সৃষ্টিকর্তার বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। যেনো আমি সৃষ্টিকর্তার রীতিনীতিগুলোকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে পারি।
তোমার দৃষ্টিপথ থেকে স্বর্গের কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এমনকি নরকের গভীর অন্ধকার গর্তের তলদেশ পর্যন্ত তোমার দৃষ্টির সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমে বলো, কোন্ কারণে আমাদের আদি পিতামহরা সৃষ্টিকর্তার অনন্ত অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েও স্বর্গসুখ থেকে বঞ্চিত হলেন? কেনো তারা মহাবিশ্বের মহান স্রষ্টার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন? কেনো তারা স্রষ্টার আদেশ অমান্য করে চরম অসংযমের পরিচয় দিলেন? কে তাদের এই জঘন্য বিদ্রোহের পথে প্রথম প্ররোচিত করেছিলো? শয়তান রূপী নারকীয় সাপই কী কৌশলে মানব জাতির আদি মাতাকে প্রতারিত করে তাঁর মনে হিংসা আর প্রতিশোধের জন্ম দেয়? বলো, কখন কোন্ সময়ে মানব জাতির আদি পিতা একদল বিদ্রোহী দেবদূতসহ তাঁর মদমত্ততার জন্যে স্বর্গ থেকে বিতারিত হন?
এসব বিদ্রোহী দেবদূতের সাহায্য নিয়ে আমাদের আদি পিতা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষতা অর্জন করার এক উদ্ধত উচ্চাভিলাষে মত্ত হয়ে স্বর্গরাজ্য ও সিংহাসন অধিকার করতে চান। এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে তিনি দর্পভরে এক অন্যায় যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এ কারণে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা শয়তানদের সরাসরি স্বর্গলোক থেকে জ্বলন্ত অবস্থায় নরকের অতল পরিখার মধ্যে ফেলে দেন। আর তারই জন্যে আমাদের আদি পিতাকে এক ভয়ঙ্কর সর্বনাশের সম্মুখীন হতে হয়। সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতার এক চরম শাস্তি হিসেবে তাঁকে জ্বলন্ত নরকের মধ্যে পরাজিত ও শিকলে বাঁধা অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়। পুরো নয় দিন ধরে তাঁকে তাঁর দলের সঙ্গে সেই জ্বলন্ত নরককু-ে মৃত্যুহীন এক যন্ত্রণায় জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু এই সর্বনাশা নরক ভোগ তার ক্রোধের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। কারণ, হারানো স্বর্গসুখ আর দীর্ঘায়িত জীবনযন্ত্রণার ভাবনা তাঁকে মানসিক ভাবে কষ্ট দিতে থাকে। তাঁর ম্লান দু চোখের বিহ্বল চারদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাঁর দীর্ঘায়িত দুঃখ-কষ্টের বিপুলতাকে দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। তবুও সেই ভীতির সঙ্গে তার সহজাত অহঙ্কার আর বদ্ধমূল ঘৃণার অনমনীয়তা মিশ্রিত হয়ে ওঠে।
Reviews
There are no reviews yet.